আখলাকে যামিমাহ (নিন্দনীয় চরিত্র) |
'যামিমাহ' শব্দের অর্থ মন্দ, অপছন্দনীয়, নিন্দনীয় ইত্যাদি। 'আখলাকে যামিমাহ' অর্থ নিন্দনীয় স্বভাব, মন্দ স্বভাব ইত্যাদি। মানবজীবনের নিকৃষ্ট, মন্দ ও নিন্দনীয় স্বভাবগুলোকে আখলাকে যামিমাহ বলা হয়। যেমন: অহংকার, ঘৃণা, মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, প্রতারণা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ, বিশ্বাসঘাতকতা, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ- লালসা, পরনিন্দা, পরচর্চা, কৃপণতা, ক্রোধ, গর্ব-অহংকার ইত্যাদি। 'আখলাকে যামিমাহ' হলো 'আখলাকে হামিদাহর' সম্পূর্ণ বিপরীত। বতর্মান পাঠে আমরা পরশ্রীকাতরতা, অশ্লীলতা, মাদকাসক্তি, অপবাদ ও ঘুষ সম্পর্কে জানব।
পরশ্রীকাতরতা |
পরশ্রীকাতরতা অর্থ অন্যের ভালো বা উন্নতিতে হিংসা প্রকাশ করা, অন্যের সৌভাগ্য সহ্য করতে না পারা। অন্যের মান-সম্মান, ধন-দৌলত, পদোন্নতির কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার ধ্বংস কামনা করাকে পরশ্রীকাতরতা বলে। পরশ্রীকাতর মানুষ অন্যের ভালো কাজে সহযোগিতা করে না, বরং বাধা সৃষ্টি করে। হিংসার বশবর্তী হয়ে, যেকোনো উপায়ে অন্যের উন্নতি ও সৌভাগ্যপ্রাপ্তিতে বাধা দেয়। অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করে। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করে না। ফলে সমাজের মানুষের মাঝে বিদ্যমান পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শান্তি বিনষ্ট হয়।
কুফল
পরশ্রীকাতরতা একটি ঘৃণ্য মানসিকতা যার কারণে নানাবিধ সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। ইসলামি শরিয়তে পরশ্রীকাতরতাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে সম্মানিত করলে ইবলিস শয়তান আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মানের প্রতি পরশ্রীকাতর হয়ে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে সে অভিশপ্ত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। পরশ্রীকাতরতার মূল কারণ পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, আত্ম-অহংকার, নেতৃত্বের প্রতি লোভ, অন্যকে হীন ভাবার প্রবণতা। পরশ্রীকাতরতার কারণেই মানব সমাজে প্রথম অপরাধ সংঘটিত হয়। হযরত আদম (আ.)-এর পুত্র কাবিল তার আপন ভাই হাবিলের প্রতি পরশ্রীকাতর হয়ে তাকে হত্যা করে। এভাবে পরশ্রীকাতরতার কারণে পাপাচার বৃদ্ধি পায়। তাই হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পরকে ঘৃণা করো না, পরস্পরকে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি ষড়যন্ত্র করো না ও পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করো না। তোমরা পরস্পর আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও। (বুখারি)
হিংসুক ব্যক্তি সব সময় অন্যের উন্নতি দেখে কষ্ট পায়। অন্যের সৌভাগ্য সহ্য করতে পারে না। সে সব সময় হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। সব সময় অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা করে। ফলে তার মানসিক শান্তি নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কিছুই শান্তিতে উপভোগ করতে পারে না। সে নিজের কাজেও যথাযথভাবে আত্মনিয়োগ করতে পারে না। ফলে তার আত্ম-উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে যে ব্যক্তি পরশ্রীকাতরতা থেকে বেঁচে থাকে, সে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারে, একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদাত করতে পারে। ফলে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য লাভে ধন্য হয়। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন সাহাবিকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কী আমল করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনাকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে উত্তম কিছু দান করলে, আমি তার প্রতি কখনোই হিংসা পোষণ করি না। (ইবনে মাজাহ)
আমরা অনেক কষ্ট করে সৎ কাজ করি। এর প্রতিদানে আল্লাহ আমাদের সাওয়াব দেন। কিন্তু পরশ্রীকাতরতা আমাদের সাওয়াবগুলো ধ্বংস করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, আগুন যেভাবে লাকড়ি জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, হিংসাও তেমন মানুষের সৎকর্মসমূহকে জ্বালিয়ে দেয় বা নষ্ট করে দেয়।' (আবু দাউদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্য হাদিসে বলেছেন, 'তিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ করা হয় না। তন্মধ্যে একজন এমন, যে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে'। (আল-আদাবুল মুফরাদ)
পরশ্রীকাতরতা মানুষকে সৎকর্ম বিমুখ করে তোলে। পরশ্রীকাতর মানুষ নেতিবাচক চিন্তা-চেতনার মাঝে ডুবে থাকে। অন্যকে হীন ও ছোট মনে করে। সুযোগ পেলেই অন্যকে অপমান-অপদস্থ করে। ফলে সমাজে হিংসা- বিদ্বেষ, হানাহানি বৃদ্ধি পায়, শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব অন্যের কল্যাণ কামনা করা, যেন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
الدِّينُ النَّصِيحَةُ
অর্থ: পারস্পরিক কল্যাণ কামনাই দ্বীন (ধর্ম)। (মুসলিম)
মু'মিন ব্যক্তি কখনও অন্যের সৌভাগ্যে অসন্তুষ্ট হতে পারে না। সে নিজের ও অন্যের জন্য সৌভাগ্য প্রত্যাশা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা পরিপূর্ণ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ নিজের জন্য যা পছন্দ করো তোমার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ না করো (বুখারি)। পরশ্রীকাতরতার কারণে পূর্ববর্তী অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের রোগ তোমাদের মাঝে সংক্রামিত হয়েছে। আর তা হলো হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা। ঘৃণা মুণ্ডন (দ্বীনকে ধ্বংস) করে দেয়।' (তিরমিযি)
অন্যের উন্নতি বা ভালো কাজ করতে দেখে, নিজের জন্যও ভালো কিছু কামনা করায় ক্ষতি নেই। যেমন জ্ঞান অর্জন বা দান-সদকা করার ক্ষেত্রে একজন অন্যজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিগণ অন্যকে ভালো কাজ করতে দেখলে নিজেও তেমন ভালো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। আল্লাহর নিকট দয়া চাইতেন, যেন আল্লাহ তাকেও এমন নিয়ামত দান করেন। মহান আল্লাহ পারস্পরিক সহযোগিতার নির্দেশ দিয়ে বলেন, 'তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করো।' (সূরা মায়েদা, আয়াত: ২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ততক্ষণ পর্যন্ত সহযোগিতা করতে থাকেন, যতক্ষণ সে তার অপর ভাইকে সাহায্য করতে থাকে।' (মুসলিম)
পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। অন্যদিকে পরশ্রীকাতরতার কারণে একজন অপরজনের উন্নতি সহ্য করতে পারে না, অন্যের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। আমাদের উচিত হিংসুকের হিংসা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদের হিংসুকের হিংসা থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। কুরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে
وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ .
অর্থ: আর হিংসুকের (পরশ্রীকাতরের) অনিষ্ট থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় চাই যখন সে হিংসা করে। (সূরা আল-ফালাক, আয়াত: ৫)
পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পেলে, পরশ্রীকাতরতা দূর হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য সালাম আদান-প্রদান করতে আদেশ দিয়েছেন। সাধ্যমতো পারস্পরিক উপহার আদান-প্রদান করতে বলেছেন। আমরা একে অপরকে ভালোবাসব, কখনো অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করব না, পরশ্রীকাতর হবো না। আমরা সবাই মিলেমিশে বসবাস করব, সুন্দর সমাজ গড়ে তুলব।
অপবাদ |
দলগত কাজ পরশ্রীকাতরতা, অপবাদ ইত্যাদির ক্ষতিকর দিকগুলোর তালিকা তৈরি করে তোমরা দলে আলোচনা করে উপস্থাপন (পোস্টারে) করো। |
অপবাদ শব্দের অর্থ কুৎসা রটনা করা, বদনাম করা, মিথ্যা দোষারোপ করা, মিথ্যা নিন্দা করা ইত্যাদি। কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তির ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়াকে অপবাদ বলে। অপবাদকে আরবিতে 'তুহমত' ও 'বুহতান' বলে। অন্যের নামে অপবাদ দেওয়া একটি জঘন্য অপরাধ। অন্যের নামে অপবাদদাতাকে মানুষ বিশ্বাস করে না, সবাই তাকে ঘৃণা করে। অনেক সময় অপবাদের কারণে একজন নির্দোষ মানুষ সমাজে দোষী হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। ফলে তার মান-মর্যাদা বিনষ্ট হয়ে যায়।
অন্যের নামে অপবাদ ছড়ানো প্রতিটি সমাজেই ঘৃণিত কাজ হিসেবে স্বীকৃত। ইসলাম সকল ধরনের অপবাদকে হারাম ঘোষণা করেছে। মিথ্যা বলা সকল গুনাহের মূল। কারো ওপর অপবাদ দেওয়া হলো জঘন্যতম মিথ্যা। কুরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে-
لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَذِبِينَ .
অর্থ: মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত তথা অভিসম্পাত। (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৬১)
অহেতুক একে অপরকে দোষারোপ করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এর অন্যতম মাধ্যম। একটা বিষয় সত্য কি না, তা না জেনেই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সবার সচেতন থাকা জরুরি। যেহেতু অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে অপবাদ দেওয়ার ঘটনাই সবচেয়ে বেশি ঘটে, সেহেতু ধারণার ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে কোনো দোষ চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। অপবাদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের উচিত মানুষের ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করা এবং অনুমান করা থেকে দূরে থাকা। যার কাছে অন্যের বিরুদ্ধে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা হয়, তার উচিত অন্ধভাবে তার কথা বিশ্বাস না করে তা যাচাই-বাছাই করা। মহান আল্লাহ বলেন, 'হে মু'মিনগণ! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থেকো।' (সূরা আল- হুজুরাত, আয়াত: ১২)
অপবাদ দেওয়া হয় ব্যক্তিগত শত্রুতা ও বিদ্বেষ থেকে। অপবাদের মাধ্যমে সাময়িক নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্রে কালিমা লেপন করা হলেও এর পরিণতি ভয়াবহ। সচ্চরিত্রা নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া ভয়াবহ অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, 'নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মু'মিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) আছে চরম শাস্তি।' (সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৩)
ইসলামে অপবাদের শাস্তির বিধান রয়েছে। যারা কোনো সৎ ও নির্দোষ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তাদের অবশ্যই চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে। চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে না পারলে প্রত্যেককে ৮০টি করে বেত্রাঘাত করা হবে। ইসলামি আদালতে কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক তথা পাপাচারী। মহান আল্লাহ বলেন, 'যারা সৎ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিল, অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারেনি, তাহলে তোমরা তাদের ৮০ বেত্রাঘাত করো, কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ কোরো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কেননা, নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।' (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৪-৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা কি জানো, গিবত কাকে বলে? সাহাবিগণ বললেন, 'আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।' তিনি বলেন, 'তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, 'হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলেও কি গিবত হবে?' উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, 'তুমি যে দোষের কথা বলো, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তবে তুমি অবশ্যই গিবত করলে আর তুমি যা বলছ, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছ।' (মুসলিম)
গিবত বা পরনিন্দা ইসলামি শরিয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। গিবত করা যেমন অপরাধ, একইভাবে ইচ্ছাকৃত গিবত শোনাও অপরাধ। আমাদের সামনে কেউ যখন অন্যের গিবত করে, তখন তাকে থামতে বলা উচিত। নয়তো সেখান থেকে সরে আসা উচিত। প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, 'পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না' (বুখারি ও মুসলিম)।
রাসুল (সা.) ভিত্তিহীন কথা বলতে ও কোনো খবর যাচাই না করেই প্রচার করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যা শোনে তা-ই বলতে থাকা কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।' (মুসলিম)
মিথ্যা অপবাদে মানুষের সম্মানহানি ঘটে। কারো সম্মানহানি করার অধিকার অন্যের নেই। যে অপর ভাইয়ের ইজ্জত খাটো করে, তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে যদি এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে যেখানে তার সম্মানহানি হয় আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল।' (আবু দাউদ)
অপবাদ কখনো কখনো কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সম্পর্কে অপবাদ দেওয়া কুফরি। অপবাদের দ্বারা বান্দার হক নষ্ট করা হয়। কারো ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হলে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের উচিত অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
পরশ্রীকাতরতা ও অপবাদ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা অনুসন্ধান
|
শিক্ষকের সহযোগিতায় পাঠ্যপুস্তকের বাহিরে পরশ্রীকাতরতা ও অপবাদ বিষয়ক ইসলামের বিধি বিধান, নির্দেশনা খুঁজে বের করো। এক্ষেত্রে, তুমি প্রয়োজনে ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির সাথে মতবিনিময় বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ, অনলাইন সোর্স ইত্যাদির সহায়তা নিতে পারো। প্রাপ্ত বিধি বিধান বা নির্দেশনা পরবর্তীতে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক উপস্থাপন করবে।
|
ঘুষ |
ঘুষ অর্থ উৎকোচ, বেতনের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক, অবৈধ উপহার ইত্যাদি। প্রতিটি কাজের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্দিষ্ট বেতন ও ভাতা পান। কোনো কাজের জন্য অসদুপায়ে বেতনের অতিরিক্ত অর্থ বা উপহার গ্রহণ করাকে ঘুষ বলে। অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবা গ্রহীতাকে সেবা গ্রহণের জন্য অর্থ দিতে বাধ্য করে, আবার অনেক সময় সেবা গ্রহীতা নিয়ম-বহির্ভূত অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে থাকে। উভয় প্রকার সুবিধা আদান-প্রদানই ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে। ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ জঘন্য অপরাধ।
ঘুষের পরিধি অনেক বিস্তৃত। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একজন অন্যজনের কাছ থেকে কোনো কিছুর বিনিময়ে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ করলেও তা ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি কেউ অন্যের জন্য সুপারিশ করে তার বিনিময়ে কোনো কিছু গ্রহণ করলে তা ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের জন্য সুপারিশ করল এবং সে এর বিনিময়ে উপহারস্বরূপ তাকে কিছু দিল, এ অবস্থায় যদি সে তা গ্রহণ করে, তাহলে সে ঘুষের দরজাগুলোর বড় একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করল।' (আবু দাউদ)
ঘুষের কুফল
ঘুষ আদান-প্রদান নৈতিক অবক্ষয় ঘটায়। মানুষ যখন নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যায়, তখন সামাজিক শান্তি- শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। সেবা গ্রহীতা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেবা পান না। অনেক ক্ষেত্রে সেবা পেতে বিলম্ব হয়। মানুষ হয়রানির শিকার হয়। পৃথিবীর সব সমাজ ও দেশেই ঘুষ আদান-প্রদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘুষদাতা বা গ্রহীতা ধরা পড়লে শাস্তি পায়। ইসলামি শরিয়তে ঘুষ আদান-প্রদান হারাম ও কবিরা গুনাহ। কেউ যদি ঘুষ আদান-প্রদানকে জায়েয মনে করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। ঘুষের মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদকে আল্লাহ তা'আলা অপবিত্র ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা'আলা ঘুষ আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকার স্পষ্ট আদেশ দিয়ে বলেন, 'তোমরা নিজেদের মধ্যে একজন অপরজনের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। মানুষের ধন সম্পদের কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকের নিকট (ঘুষ হিসেবে) পেশ করিও না'। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৮)
ঘুষের মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা সাময়িক ভোগ-বিলাস করা সম্ভব হলেও এর দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। ঘুষখোর ব্যক্তিকে সবাই ঘৃণা করে। আখিরাতেও তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় প্রলোভনের কারণে অনেকেই এই ঘৃণ্য অপরাধে জড়িয়ে যায়। সহজেই অর্থ উপার্জনের নেশায় যেন তারা দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা থেকে বঞ্চিত না হয়, তাই মহান আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করে বলেন, (হে আল্লাহর রাসুল!) আপনি বলুন, অপবিত্র ও পবিত্র (সম্পদ) সমান নয়। যদিও হারামের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। কাজেই হে বুদ্ধিমানগণ! আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১০০)
ঘুষ আদান-প্রদানকারী উভয়েই অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে। অনেক মানুষ তাদের কারণে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। বঞ্চিত মানুষ ঘুষদাতা ও গ্রহীতাকে অভিশাপ দেয়। আল্লাহ তা'আলা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও তাদের অভিসম্পাত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِيْ
অর্থ: ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপরই আল্লাহর অভিশাপ। (মুসনাদে আহমাদ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِيْ كِلَا هُمَا فِي النَّارِ
অর্থ: ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি। (তাবারানি)
হাদিসে আরো এসেছে,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِيْ
অর্থ: ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন। (তিরমিযি)
অনেক সময় অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি দায়িত্ব পালনকালে অতিরিক্ত উপহার গ্রহণ করলে, তা ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে। যেমন হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইবনুল লুতবিয়া নামের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। সে যাকাত আদায় করে ফিরে এসে বলল, এগুলো আপনাদের যাকাতের সম্পদ, আর এগুলো আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করার পর বললেন, আমার কর্মচারীর কী হলো! সে আমাকে বলে, এগুলো আপনাদের, আর এগুলো আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে। সে তার মাতা- পিতার ঘরে বসে থাকল না কেন? তখন সে দেখত পেত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি না? আল্লাহর কসম, তোমাদের মাঝে কেউ অন্যায়ভাবে কোনো কিছু আত্মসাৎ করলে, সে তা কাঁধে করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। তখন তার আত্মসাৎকৃত সম্পদ উট হলে সে তার (উটের) আওয়াজ করবে, আর গরু হলে গরুর আওয়াজ করবে আর বকরি হলে বকরির আওয়াজ করতে থাকবে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দুই হাত এতটুকু উপরে উঠালেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? (বুখারি ও মুসলিম)
আল্লাহ তা'আলার কাছে কেউ মাফ চাইলে, মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। কিন্তু তিনি বান্দার হক মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত যার হক নষ্ট করা হয়েছে সে মাফ করে না দেয়। তাই আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহ মাফ করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঘুষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তাকে মাফ না করে।
ঘুষখোর ব্যক্তি অন্যের অধিকার হরণ করে, ফলে সবাই তাকে ঘৃণা করে। এভাবে সমাজে পারস্পরিক ঘৃণা- বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় ও শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। ঘুষের বিপরীত হচ্ছে উপহার। হীন উদ্দেশ্য ব্যতীত ভালোবেসে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টির জন্য একজন অন্যজনকে কিছু দেওয়ার নাম উপহার। উপহার আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উপহার আদান-প্রদান করতে উৎসাহিত করেছেন। আমরা ঘুষ গ্রহণ ও প্রদান থেকে বিরত থাকব। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলিত সমাজ গড়ে তুলব।
মাদকাসক্তি |
মাদকদ্রব্য মানুষের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়, নেশার উন্মেষ তৈরি করে এবং চিন্তা শক্তিকে লোপ করে দেয়। সাধারণত বিশেষ খাদ্যবস্তু ও পানীয় পানের মাধ্যমে মানুষ নেশা করে। নেশা মানুষকে স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে দেয় না। তাই মাদককে হারাম করা হয়েছে। মাদকাসক্তি খুবই জঘন্য ও ঘৃণ্য বদঅভ্যাস। সকল প্রকার মাদক দ্রব্য ইসলামে নিষিদ্ধ। মাদককে আরবিতে 'খমর' বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَنِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ: হে মু'মিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো অপবিত্র এবং শয়তানের কর্ম। তোমরা তা ত্যাগ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত: ৯০)
সকল বদঅভ্যাস ত্যাগ করা গেলেও মাদকাসক্তি সহজে ত্যাগ করা যায় না। মাদক মানুষের জ্ঞানকে বিলোপ করে। সামান্য পরিমাণে মাদক গ্রহণও হারাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'যে সকল দ্রব্যে অধিক পরিমাণ নেশা হয়, সে সকল জিনিস অল্প পরিমাণও হারাম'। (তিরমিযি)
নেশাজাত দ্রব্যাদির মাঝে অন্যতম হচ্ছে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, আফিম, হেরোইন, মারিজুয়ানা, এলএসডি, কোকেন, মরফিন, ভাং, তাড়ি, কোডিন ট্যাবলেট, রেক্টিফাইড স্পিরিট, বুপ্রেরনফিন, অ্যালকোহল ইত্যাদি। নেশার উদ্দেশ্যে এই সকল বস্তু সেবন কিংবা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।
মাদকাসক্তি অসংখ্য পাপ কাজের উৎস। মাদকাসক্তির ফলে মানুষ হত্যা, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ঝগড়া- ফাসাদসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায়। মাদকাসক্তি সামাজিক বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি করে। পারিবারিক কলহ ও অশান্তি সৃষ্টি করে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বিনষ্ট করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন 'মদ্যপান সকল অশ্লীলতা ও কবিরা গুনাহের উৎস'।
মাদকাসক্তির ফলে আল্লাহর নিকট ইবাদাত কবুল হয় না। এছাড়াও মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা অপছন্দ করেন। মাদকাসক্তি মানুষকে যিকির, খোদাভীরুতা ও ইবাদাত থেকে দূরে রাখে। প্রিয় রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'মদ্যপায়ী ব্যক্তি মৃত্যুর পর মূর্তিপূজারির মতো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে'। (মুসনাদে আহমদ)
মাদকাসক্তির পাশাপাশি মানুষের আরেকটি বদঅভ্যাস হচ্ছে ধূমপান। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিড়ি, সিগারেট, চুরুট ও তামাকজাত দ্রব্য দিয়ে ধূমপান করা হয়। ইসলামে ধূমপানও নিষিদ্ধ। ধূমপানের ফলে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। দুর্গন্ধযুক্ত মুখে মসজিদে গমন নিষেধ। দুর্গন্ধের ফলে অপরাপর মুসল্লিদের সমস্যা হয়। মহানবি (সা.) মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন।
ধূমপানের ফলে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তামাকে থাকা নিকোটিন একটি বিষাক্ত দ্রব্য। ধূমপানের সংস্পর্শে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের বেশি শারীরিক ক্ষতি হয়। ধূমপানের মাধ্যমেই কিশোররা অপরাপর মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ধূমপান ও মাদকাসক্তি অর্থের অপচয়ও ঘটায়। অর্থের যোগানের জন্য সমাজে এরা বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পারিবারিক কলহ তৈরি করে। মাতা-পিতার সঙ্গে অসদাচরণ করে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। আল্লাহ তা'আলা অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই'। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৭)
আর্থিক অপচয় ছাড়াও মাদকাসক্তি ও ধূমপানে স্বাস্থ্যহানি সবচেয়ে বেশি হয়। এর ফলে লিভারের সমস্যা, হেপাটাইটিস, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, ব্রংকাইটিস, যক্ষ্মা, গ্যাস্ট্রিক, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, স্বাদ কমে যাওয়া, শ্বাসনালির ক্যান্সার, স্নায়ুর ক্ষতিসহ জটিল ও দুরারোগ্য রোগ হয়। অনেক সময় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামে হালাল হারামের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা সকলকে হালাল খাবার গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুষ্টিকর সকল ধরনের খাবারকে হালাল আর ক্ষতিকর সকল বস্তুকে হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তোমরা উত্তম ও হালাল জিনিস ভক্ষণ করো যা আমি তোমাদের রিযিক হিসেবে দান করেছি।' (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৭২)
অতএব আমরা মাদকাসক্ত না হয়ে সুন্দর স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করব।
অশ্লীলতা |
আখলাকে যামিমাহ বা নিন্দনীয় চরিত্রের মধ্যে অশ্লীলতা প্রথম সারিতে। অশ্লীলতা হলো লজ্জাহীন আচরণ। লজ্জা মানুষকে সকল অনিষ্ট থেকে বিরত রাখে। লজ্জা বা শালীনতা হচ্ছে ইমানের একটি বিশেষ অঙ্গ। একজন মুসলমানের অন্তর সর্বদা পরিশুদ্ধ থাকতে হয়। অন্তর পরিশুদ্ধ করতে প্রয়োজন শালীনতা ও পবিত্র মানসিকতা। অশ্লীলতায় লিপ্ত থেকে এটি কখনো পাওয়া সম্ভব নয়। আর অশ্লীলতা এতই জঘন্য অপবিত্র যে আল্লাহ তা'আলা এর নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছেন। কেননা, অশ্লীলতা অন্য সকল পাপের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
অর্থ: প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেয়ো না। (সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ১৫১) বর্তমানে আধুনিক সমাজব্যবস্থায় অশ্লীলতাকে বিভিন্নভাবে চাকচিক্যময় করে আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। ইসলামি জ্ঞান না থাকার কারণে, নিজের অজান্তেই আমরা তা গ্রহণ করছি এবং প্রচার-প্রসার করছি। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'যারা চায় মু'মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।' (সূরা আন-নূর, আয়াত :১৯)
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। বিবেকসম্পন্ন সৃষ্টির সেরা প্রাণি হিসেবে মানুষ শালীন হবে এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক। শয়তান মানুষকে অশালীন আচরণ করতে আদেশ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'সে তো এ নির্দেশ দেবে যে তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাকো এবং আল্লাহর প্রতি সে বিষয় মিথ্যারোপ করো যা তোমরা জানো না।' (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৯)
একজন দুশ্চরিত্র মানুষ স্বভাব, কথা-কাজ, সমস্ত কিছুতেই অশ্লীলতার ছাপ রেখে যায়। মানুষ ও সমাজের সঙ্গে তার আচরণ রূঢ় হয়। প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, 'মু'মিন কখনো খোঁটাদানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীলভাষী হয় না।' (তিরমিযি)
একজন অশালীন ব্যক্তি কখনোই সমাজের সুশৃঙ্খল ও সুন্দর নিয়ম পছন্দ করবে না। সে অশ্লীলতা পছন্দ করবে। কারণ, তার অন্তর মৃত। সে শালীনতার সৌন্দর্য ও সুখ অনুধাবন করতে ব্যর্থ। আমরা সব সময় শালীনতার চর্চা করব। সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকব।
প্রতিফলন ডায়েরি লিখন |
'আখলাকে যামিমাহ (পরশ্রীকাতরতা, অপবাদ, ঘুষ, মাদকাসক্তি ও অশ্লীলতা) আমাদের সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে' (উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তুমি ২০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো এবং পরবর্তীতে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক উপস্থাপন (উপস্থিত বক্তৃতা) করবে।) |
আরও দেখুন...